সজনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম

সম্মানিত পাঠক, সজনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে যদি আপনি বিস্তারিত জানতে চান তাহলে আজকের এই পোস্টটি আপনার জন্য। আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় হলো সজনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সর্ম্পকে সেজন্য শেষ অবধি পড়ুন।সজনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়মভূমিকা

পুষ্টি গুণে ভরপুর সজনে পাতা এবং সজনে পাতার ফল আমাদের সকলেরই পরিচিত। এটিকে অনেকে সাজনা বা মরিঙ্গা বলে থাকে।বিভিন্ন রোগীর জন্য বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীর সজনে পাতার উপকারিতা অনেক বেশি। উপকারিতার বিপরীতে সজনে পাতার অপকারিতাও রয়েছে । সজনে বা সজনে পাতা অনেকভাবে খাওয়া যায় এবং সজনে গাছ সব জায়গাতেই দেখা মিলে।

সজনে পাতার উপকারিতা

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পাতার উপকারিতা অনেক বেশি। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এই পাতা এবং এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আমাদের শরীরের সকল ধরনের রোগ প্রতিরোধ করতে অনেক সহায়তা করে। ছাড়াও ভিটামিন সি আমাদের ত্বক উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে এবং ত্বককে ক্ষতিকর রশ্মি এবং পদার্থ থেকে রক্ষা করে। সজনে পাতা সুপার ফুডের তালিকায় রয়েছে।

সজনে পাতা শরীরের প্রয়োজনীয় হরমোন বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের ব্যথা কমাতে সজনে পাতা সাহায্য করে। ভিটামিন সি এর পাশাপাশি সজনে পাতায় রয়েছে প্রচুর ভিটামিন এ। এটি আমাদের চোখের জন্য অনেক উপকারী। তাই চোখ ভালো রাখতে নিয়মিত সজনে পাতা খেতে পারেন।রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল কমায়। এ পাতা খাওয়ার মাধ্যমে পেট পরিষ্কার থাকে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য হয় না।

এই অলৌকিক পাতায় আমিষ, শর্করা, ফাইবার ও খুবই অল্প পরিমাণ চর্বি রয়েছে। তাছাড়াও সজনে পাতায় প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন ইত্যাদি পাওয়া যায়।অনেক বিশেষজ্ঞরা সজনে পাতাকে গরুর দুধের সাথে তুলনা করে থাকেন। কেননা গরুর দুধের মত পুষ্টিগুণ রয়েছে সজনে পাতায়। এটিতে কমলালেবুর চেয়ে অনেক গুণ বেশি ভিটামিন সি রয়েছে। যারা উচ্চ রক্তচাপ এবং হার্টের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য সজনে পাতা খুব ভালো ঔষধ এর ন‍্যায় কাজ করে। এই পাতা খেলে ঘন ঘন প্রস্রাব জাতীয় সমস্যা দূর হয়।

এটি পেটের ব্যাকটেরিয়া এবং কৃমি ধ্বংস করে। যাদের হাড়ের সমস্যা এবং ব্যথা রয়েছে তারা নিয়মিত এটি খেলে সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। পোকামাকড় কামড়ালে বা কেটে গেলে কোথাও কিছু না পেলে চিন্তার কোন কারণ নেই। সজনে পাতা বেটে ক্ষতস্থানে লাগালে এটি খুব ভালো কাজ করে।

এতে কোন ধরনের ফ্যাট নেই। এতে ফাইবার রয়েছে যা হজম ক্রিয়া সহজ করে এবং আমাদের শরীরে চর্বি জমতে দেয় না। এসব ছাড়াও আরও অনেক উপকারিতা রয়েছে এই অলৌকিক পাতার।

ডায়াবেটিস রোগীর সজনে পাতার উপকারিতা

পুষ্টিবিদগণের মাধ্যমে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, রক্তে গ্লুকোজ এবং কার্বোহাইড্রেট এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে সজনে পাতা এবং এক্ষেত্রে সজনে ডাটা এর ভূমিকাও রয়েছে। তাই ডায়াবেটিস রোগীর জন্য কাঁচা সজনে পাতার উপকারিতার পাশাপাশি সজনে ডাটা খাওয়া উচিত। কেননা সজনে ডাটায় এবং পাতায় অনেক ভিটামিন সি ও খনিজ পাওয়া যায়।
ডায়াবেটিস রোগীর অন্যান্য খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি সপ্তাহে দিন থেকে চার দিন খাবার তালিকায় সজনে পাতা এবং এর ডাটা রাখলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয় এবং অনেক উপকারিতা মিলে। সজনে পাতায় অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি রয়েছে যা ডায়াবেটিস এর বিরুদ্ধে কাজ করে। এই পাতাতে এমন অনেক উপকারী যৌগ রয়েছে যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিক রাখে।
শুধু সজনে পাতা এবং ডাটা খেলেই ডায়াবেটিস রোগ একেবারে ভালো হবে তা নয়, বরং সঠিক চিকিৎসা এবং খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে ডায়াবেটিস চিরতরে নির্মূল করা সম্ভব। তবে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সজনে পাতা রাখলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনতে।
এই পাতায় অ‍্যাসিম‍্যানান নামক উপকারী উপাদান থাকে এটিও আমাদের শরীরের গ্লুকোজ কমাতে সহায়তা করে। এছাড়াও আরও নানা ধরনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে যা ডায়বেটিস রোগীর জন্য খুবই উপকারী। 

সজনে পাতা দিয়ে রূপচর্চা

সজনে পাতায় থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। এটি ত্বকের রোদে পোড়া কালো ভাব দূর করে এবং সূর্যের ক্ষতিকর আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে ত্বককে বাঁচায়। সজনে পাতা বেটে নিয়ে এর সাথে হলুদ এবং বেসন নিয়ে তাতে টমেটোর রস দিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্ট মুখে, হাতে এবং ঘাড়ে ২০ থেকে ৩০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন।
সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন ব্যবহার করুন, ফলে ধীরে ধীরে আপনার ত্বক অনেক উজ্জ্বল এবং জীবাণুমুক্ত হবে। এটি কালো দাগ দূর করবে এবং ব্রণ জাতীয় সমস্যাও দূর হবে ও বয়সের ছাপ দূর হয়। এভাবে ত্বকের যত্নে সজনে পাতার উপকারিতা পেতে পারেন।

সজনে পাতার অপকারিতা

সাজনা বা সজনে পাতা পুষ্টিগুণে ভরপুর। তবে অতিরিক্ত এটি খেলে অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে। ফাইবার থাকার কারণে এটি বেশি খেয়ে ফেললে পেটের সমস্যা হতে পারে এবং বমি বমি ভাব হয়। যাদের প্রেশার অনেক কম তারা সজনে পাতা এড়িয়ে চলুন।
ঔষধের পাশাপাশি সজনে পাতা খেলে প্রেশার আরও কমতে পারে। শুনে পাতার ডালে বিষাক্ত পদার্থ থাকে। তাই এই পাতার গুড়া বা রস খাওয়ার আগে সতর্ক থাকুন এবং শিশু ও গর্ভবতী মহিলাদের থেকে দূরে রাখুন। সজনে পাতার অপকারিতা থেকে বাঁচতে সঠিক সময় সঠিকভাবে খেতে হবে।

সজনে পাতা খাওয়ার নিয়ম

সজনে পাতা বিভিন্ন নিয়মে খাওয়া যায়। সজনে বা সজনে পাতা সংগ্রহ করার সময় ডাল থেকে ভালো করে আলাদা করতে হবে। ডাল-সহ নেওয়া যাবেনা, কেননা এতে ক্ষতিকর পদার্থ রয়েছে। পাতা ভালোভাবে সিদ্ধ করে তরকারিতে দিয়ে খাওয়া যায়। আবার অনেকে ভর্তা করে খেতে পছন্দ করেন। এটি খাওয়ার সবচেয়ে ভালো নিয়ম হলো জুস করে খাওয়া।
জুসের সাথে চিনি না মিশিয়ে মধু মেশাতে পারেন, এতে এর উপকারিতা আরও কয়েক গুণে বৃদ্ধি পাবে। এটি শাকের মতো ভাজি করেও খাওয়া যায় অথবা শুধু পাতা বেটে এটির রস খেতে পারে। বিভিন্ন মসলার সাথে চাটনি বানিয়ে ভাতের সাথেও খেতে পারেন। এতে মুখের রুচি ফিরিয়ে আনে।

সজনে পাতা গুড়া করার নিয়ম

সজনে পাতা গাছ থেকে পেড়ে ভালোভাবে ধুয়ে ব্লেন্ডারের মাধ্যমে গুড়া করতে পারেন। এই-গুড়ার সাথে মধু এবং সামান্য লেবুর রস মিশিয়ে শরবত বানিয়ে খেলেও অনেক তৃপ্তি এবং উপকার পাওয়া যায়। এছাড়াও সজনে পাতার গুড়া বাজারে কিনতে পাওয়া যায় অথবা ঘরের বাজার বিডি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এটি সংগ্রহ করতে পারেন।
সজনে পাতা গুড়া করে বা যেমনি ভাবে খাওয়া হোক না কেন এতে একই উপকার পাওয়া যায়। গুড়ার সাথে কালোজিরা বা চিয়া সিড মিশিয়ে খেলে আরও বেশি সজনে পাতার গুড়া খাওয়ার উপকারিতা বেড়ে যায়।

উপসংহার

সজনে গাছের উপকারিতা না জানার কারণে  গ্রামে গঞ্জে মরিঙ্গা বা সজনে পাতার ব্যবহার দিন দিন কমে যাচ্ছে । সজনে গাছ সব জায়গাতেই দেখা যায় এবং এটি রোপণ করাও সহজ। নিজেরা এই গাছটির সর্বোচ্চ ব্যবহার করবো এবং অন্যদেরকেও গাছটি সম্পর্কে উদ্বুদ্ধ করবো । সজনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো সবাইকে জানাতে এই আর্টিকেলটি শেয়ার করুন। ধন্যবাদ

Leave a Comment